Monday, November 23, 2020

জমিদারি নয়

মন্দবাসা গুলো ভীড় করে আসে আসুক না, 

রোজ সকালে, চোখের জলে দিনটা ভাসে, ভাসুক না।

দিনের শেষে, রুক্ষ বেসে, কষ্ট গুলো দেয় নাড়া, 

মনের ঘরে একলা, ডরে, ইচ্ছেগুলোও ঘরছাড়া!

সময়ে অসময়ে অদৃষ্টও তোমায় দেখে হাসুক না, 

তোমার হৃদয়, কারো জমিদারি নয়, নিজের মত বাঁচুক না। 


সন্ধ্যে হলে, আঁধার নামে, মনের গহনে মৃত্যু চাও,

মনে হয় কেউ তোমার নয়, মৃত্যু হলে মুক্তি পাও! 

গলা ফুঁড়ে আসে কষ্টগুলো, গিঁট মেরে যায় আলজিভে!

তবুও কি আজও স্বপ্ন দেখো, সময় কাটাতে মালদ্বীপে!

তোমার জীবনে, তোমার মনে স্বাবলম্বন জাগুক না, 

তোমার জীবন কারো জমিদারি নয়, নিজের মত বাঁচুক না। 

Saturday, November 21, 2020

হাল ছেড়ো না বন্ধু

আজকে সে নাহয় জিতেই গেছে, কাল অবধিও হারতো,
কালকে রাতেও এগিয়ে যাওয়ার হাল ছেড়ে দিতে পারতো। 
 
আজকে নাহয় সুর সেধেছে, কাল অবধিও ছড়িয়েছে,
কালকে রাতেও হারমনিয়াম টা এপাশ ওপাশ গড়িয়েছে।
 
আজকে নাহয় পান চিবিয়েছে, কাল অবধিও খসেছে চুন,
কালকে রাতেও পাড়ার রকে ডান্স করেছে সেজে মিঠুন।
 
আজকে নাহয় ধ্রুবতারা চিনে খুঁজে নিয়েছে হাঁটার পথ,
কালকে রাতেও কালপুরুষকে দেখে বলেছিল ঐরাবৎ।

Friday, November 13, 2020

চশমা

ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি। ঝাপসা চশমার কাঁচে প্রায় কিছুই দেখা যাচ্ছে না। এরকম অবস্থায় ছাতা হাতে আর এগিয়ে যেতে না পেরে, একটা বন্ধ চায়ের দোকানের ছাউনি এর নীচে গিয়ে দাঁড়ালো আবির। ট্রাউজারের পকেট থেকে রুমালটা বের করে চশমার কাঁচটা মুছতে মুছতে হঠাৎ রাস্তাটা যেন পরিস্কার হয়ে গেল চোখের সামনে। আর চোখে পড়লো রাস্তার ওপারে একটা মেয়ে। বয়স খুব বেশী হলে আঠারো থেকে কুড়ি, রাস্তা পেরোনোর চেষ্টায় দোনামনা করছে। খুব চেনা চেনা ঠেকছে মুখটা, কিন্তু কিছুতেই মনে করতে পারছে না আবির।
 
কে, কোথায় দেখেছে ভাবতে ভাবতেই, হঠাৎ একটা দৌড়ে রাস্তা পেরনোর জন্য পা বাড়ালো মেয়েটি। ঠিক মূহুর্তের মধ্যেই ডান দিকের একটা বাঁক থেকে একটা গাড়ি তীব্র গতিতে এগিয়ে আসতে দেখে আবিরের হাত পা কেঁপে উঠলো। হাতের চশমাটা হাত থেকে পড়ে গেল। তার পা দুটো অস্থিরতার মধ্যে মূহুর্তে দৌড় লাগালো মেয়েটির দিকে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই আবির ঠিক গাড়ির সামনে। ইতিমধ্যে মেয়েটা আবিরের একদম সামনে, যেন খিলখিলিয়ে হাসছে আবিরের দিকে চেয়ে। সেই হাসি মাখা চেহারাটা দেখে সারা শরীর বেয়ে ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেল আবিরের। মূহুর্তে গাড়িটা তার শরীরের হাড় গোড় ভেঙে ফেলার আগে আবিরের মনে পড়ে গেল, ঠিক এই রাস্তার ওপরেই, এরকম একটা বৃষ্টিমুখর সন্ধ্যেতে আবিরের চলন্ত গাড়ির কাঁচে এসে ধাক্কা খেয়েছিল এই চেহারাটাই।

Tuesday, November 3, 2020

আঙুল

ঝোপ জঙ্গলের ডালপালা ঠেলে, কাঁটা-পাথর উপেক্ষা করে প্রাণ হাতে নিয়ে ছুটে চলেছে মায়া। ভয়ে, ক্লান্তিতে চোখ মুখ লাল কালো ছোপে ভরে গেছে। পা দুটো ছড়ে রক্তাক্ত, তবুও হাঁপাতে হাঁপাতে প্রায় হিঁচড়ে নিজেকে টেনে নিয়ে চলেছে। ঘন্টা খানেক আগেই যে পরিস্থিতিটা সে পেরিয়ে এসেছে, ভাবতেই তার জিভ শুকিয়ে কাঠ হয়ে আসছে। মাথার ওপর রোদের ছিঁটেফোঁটা যা ছিলো, কখন যে একরাশ ভয় উদ্বেগ মাখা অন্ধকারে পরিণত হয়েছে খেয়ালও করেনি। হাতের কব্জি ঘিরে লাল গোলাকার দাগ থেকে লাল রক্তের ফোঁটা চুঁইয়ে আঙুল বেয়ে সবুজের বুকে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
সামনে এক বিশাল হাড়িকাঠ, একটা আস্ত মানুষ গলে যাওয়ার মত। চারিদিকে সব অদ্ভুত দর্শন, গাছের ডাল পাতা আবৃত, রঙ মাখা একদল জীব দুহাত তুলে লাফাচ্ছে আর কান ঝালাপালা করা শ্রুতিকটু শব্দে ভরিয়ে দিচ্ছে আকাশ, বাতাস, বাতাবরণ। মাথার একপাশের একটা টনটনে ব্যাথা আর হাতে পায়ে তীব্র জ্বালায় খেয়াল হলো, একটা মোটা দড়ি দিয়ে তার হাত পা একটা মোটা লম্বা কাঠের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে তাকে, আর তার সাথে আরো জনা তিন চারেক। ঝাপসা চোখে চারিদিকের ভয়াবহ রূপটা দেখে সারা শরীরে, রোমে রোমে আতঙ্কের পুঞ্জীভূত অ্যাড্রানালিন রাসটা গা বমি দিয়ে বেরিয়ে আসছে প্রায়। হঠাৎ তার আবছা দৃষ্টিতে পড়লো, হাড়িকাঠের ঠিক পাশে একটা ধড় থরথরিয়ে কাঁপছে, আর ফিনকি দেওয়া রক্তে ভরে গেছে তার চারপাশ। এরমধ্যে একজন ওই ধড়ের ডানহাতের কড়ে আঙুলটা পাথরের এক ঝটকায় কেটে একটা পাতায় মুড়ে কয়েকপা দূরের এক জ্বলন্ত আগুনের চাঁই এর মধ্যে ফেলে দিয়ে আবার দুহাত তুলে লাফাতে লাগলো। 
 
এরপর আর কিছুই খেয়াল নেই তার। তবে ঝোপ জঙ্গল বেয়ে সে ছুটে চলেছে, জনবসতি অঞ্চলে এসে না পৌঁছানো অবধি তাকে ছুটেই যেতে হবে, এ ব্যাপারে তার মনে একাংশও সন্দেহ নেই। মাঝে মধ্যে দূর থেকে সেই শ্রুতিকটু শব্দের হুল্লোড় কানে এসে পৌঁছাচ্ছে তার। হঠাৎ এক ঝটকায় কে যেন তার হাতটা ধরে টান মারলো। তীব্র জ্বালায় হাতটা যেন ছিঁড়ে যাচ্ছে। জ্বালা, ব্যাথা, ভয়, উদ্বেগের মধ্যে কিছু বুঝে ওঠার আগেই, টানতে টানতে সোজা এক গুহার মুখে। এখনো চোখের দৃষ্টি ঝাপসা, তবে যে চেহারাটা চোখে পড়ছে, তা আর ‌যাই হোক ভয়ংকর নয়। একটা অদ্ভুত শান্তি আর শ্রান্তিতে আবার জ্ঞান হারালো মায়া।
 
টিমটিমে একটা আলো এসে পড়ছে চোখে। টনটনে যন্ত্রনায় মাথাটাও ভার। তবে খেয়াল করলো হাত, পায়ের জ্বালা, ব্যাথাটা এখন বেশ কম। চোখ খুলতেই এবার স্পষ্ট দেখতে পেলো সে একটা সুন্দর গোছানো ঘরের মধ্যে একটা নরম বিছানায় শুয়ে, আর তার সামনে, জ্ঞান হারানোর আগের সেই চেহারাটা। মুখে একটা স্মিত হাসি আর ডানহাতে একটা জ্বলন্ত সিগারেট। হঠাৎ এরপর যেটা তার চোখ পড়লো, তা দেখে মায়ার সারা শরীর বেয়ে ঠান্ডা স্রোত খেলে গেলো, স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে সামনের ব্যাক্তিটির সিগারেট ধরা ডান হাতের কড়ে আঙুলটা, অর্ধেক, ঠিক মাঝখান থেকে কাটা।

Sunday, November 1, 2020

কাঁধ

হঠাৎ, অনেকদিন পর গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার উত্তেজনাটা আনন্দ ও স্মৃতিমেদুরতায় ভরে গেলো যখন তেঁতুলগাছটার ছায়ায় দাঁড়িয়ে সামনের সবুজ ধানক্ষেতটা চোখের সামনে ভেসে উঠলো। এরই মধ্যে আচমকা, তেঁতুল গাছের ফোকর থেকে কাঠবিড়ালিটা আমার গা ঘেঁষে, সামনের মোরামের রাস্তা পেরিয়ে ধানক্ষেতে বিলীন হয়ে গেলো।

 
সাপখোপের উপদ্রব এদিকে খুব বেশী তাই গা ঘেঁষা শিরশিরে হাওয়ায় চমকে উঠেছিলাম। হৃদস্পন্দনটা সামান্য হতেই হঠাৎ ডান কাঁধের ওপর একটা চাপ অনুভব করলাম, যেন কেউ হাত রাখলো আমার কাঁধে। হুড়মুড়িয়ে পেছনে ফিরে দেখি, কেউ কোত্থাও নেই। শুধু কয়েকশো মিটার দূরে ধানক্ষেতের মধ্যে ভাঙা হাঁড়ি আর ছেঁড়া, খুব চেনা চেনা একটা জামায়, কাকতাড়ুয়াটা যেন আমার দিকে এক অদ্ভুত গোলগোল অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে রয়েছে। আবার মুখ ফেরাতেই, এবার যেন একটা ধাক্কা পড়লো পিঠে, কিছু বুঝে ওঠার আগেই আবার ধাক্কা, ধাক্কার পর ধাক্কা। আর সেই ধাক্কার চোটে আমিও যেন হাঁটতে লাগলাম, কোনো এক অদ্ভুত ঘোরের মধ্যে।
 
জলের একটা ঝাপটায় আচমকা চোখটা খুলে দেখি, তেঁতুল গাছের নিচে খাটিয়ার ওপর শুয়ে আমি, আর আমাকে ঘিরে চারিদিকে আমাদের গ্রামের লোকজন। তাদের মধ্যেই একজন বলে উঠলো, 'কিরে এতদিন পরে বাড়ি ফিরেই, শ্মশানে কি করতে গিয়েছিলি!' আর এই প্রশ্নতেই স্মৃতি থেকে ভেসে উঠলো, ওই তেঁতুল গাছের নিচে বসে আমার দাদুর বলা কথাটা, 'যেদিন শ্মশানে যাব, আমার দাদুর কাঁধে চড়েই যাব।'
 
বছর তিনেক হয়ে গেলো দাদু মারা গেছেন, তার শেষকৃত্যে আমার আসা হয়ে ওঠেনি। কেউ যেন আবার বলে উঠলো, 'ওই কাকতাড়ুয়াটার জামাটা দেখছিস! ওই জামাটা পরেই তোর দাদু মারা গেলেন। তার শেষ ইচ্ছে ছিল, যে জামা পরে তিনি মারা যাবেন সেটা যেন এই কাকতাড়ুয়াটা কে পরিয়ে দেওয়া হয়'। আবার চোখ ফেরালাম কাকতাড়ুয়াটার দিকে, সেই অপলক দৃষ্টির অদ্ভুত ভাবটা আর নেই। অনুভব করলাম, কাঁধের ওপর চাপটাও আর নেই আর চোখে পড়লো, তেঁতুল গাছের নিচে কাঠবেড়ালির নিথর দেহটা পড়ে রয়েছে।