Sunday, November 1, 2020

কাঁধ

হঠাৎ, অনেকদিন পর গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার উত্তেজনাটা আনন্দ ও স্মৃতিমেদুরতায় ভরে গেলো যখন তেঁতুলগাছটার ছায়ায় দাঁড়িয়ে সামনের সবুজ ধানক্ষেতটা চোখের সামনে ভেসে উঠলো। এরই মধ্যে আচমকা, তেঁতুল গাছের ফোকর থেকে কাঠবিড়ালিটা আমার গা ঘেঁষে, সামনের মোরামের রাস্তা পেরিয়ে ধানক্ষেতে বিলীন হয়ে গেলো।

 
সাপখোপের উপদ্রব এদিকে খুব বেশী তাই গা ঘেঁষা শিরশিরে হাওয়ায় চমকে উঠেছিলাম। হৃদস্পন্দনটা সামান্য হতেই হঠাৎ ডান কাঁধের ওপর একটা চাপ অনুভব করলাম, যেন কেউ হাত রাখলো আমার কাঁধে। হুড়মুড়িয়ে পেছনে ফিরে দেখি, কেউ কোত্থাও নেই। শুধু কয়েকশো মিটার দূরে ধানক্ষেতের মধ্যে ভাঙা হাঁড়ি আর ছেঁড়া, খুব চেনা চেনা একটা জামায়, কাকতাড়ুয়াটা যেন আমার দিকে এক অদ্ভুত গোলগোল অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে রয়েছে। আবার মুখ ফেরাতেই, এবার যেন একটা ধাক্কা পড়লো পিঠে, কিছু বুঝে ওঠার আগেই আবার ধাক্কা, ধাক্কার পর ধাক্কা। আর সেই ধাক্কার চোটে আমিও যেন হাঁটতে লাগলাম, কোনো এক অদ্ভুত ঘোরের মধ্যে।
 
জলের একটা ঝাপটায় আচমকা চোখটা খুলে দেখি, তেঁতুল গাছের নিচে খাটিয়ার ওপর শুয়ে আমি, আর আমাকে ঘিরে চারিদিকে আমাদের গ্রামের লোকজন। তাদের মধ্যেই একজন বলে উঠলো, 'কিরে এতদিন পরে বাড়ি ফিরেই, শ্মশানে কি করতে গিয়েছিলি!' আর এই প্রশ্নতেই স্মৃতি থেকে ভেসে উঠলো, ওই তেঁতুল গাছের নিচে বসে আমার দাদুর বলা কথাটা, 'যেদিন শ্মশানে যাব, আমার দাদুর কাঁধে চড়েই যাব।'
 
বছর তিনেক হয়ে গেলো দাদু মারা গেছেন, তার শেষকৃত্যে আমার আসা হয়ে ওঠেনি। কেউ যেন আবার বলে উঠলো, 'ওই কাকতাড়ুয়াটার জামাটা দেখছিস! ওই জামাটা পরেই তোর দাদু মারা গেলেন। তার শেষ ইচ্ছে ছিল, যে জামা পরে তিনি মারা যাবেন সেটা যেন এই কাকতাড়ুয়াটা কে পরিয়ে দেওয়া হয়'। আবার চোখ ফেরালাম কাকতাড়ুয়াটার দিকে, সেই অপলক দৃষ্টির অদ্ভুত ভাবটা আর নেই। অনুভব করলাম, কাঁধের ওপর চাপটাও আর নেই আর চোখে পড়লো, তেঁতুল গাছের নিচে কাঠবেড়ালির নিথর দেহটা পড়ে রয়েছে।

No comments:

Post a Comment