Sunday, March 7, 2021

টাইম লুপ

 

বড্ড অস্বস্তিকর লাগছে, কিছুতেই ব্যাপারটা বুঝে উঠতে পারছি না। জট পাকানো চিন্তাভাবনায় জর্জরিত হয়েই ছুটছি স্টেশনের দিকে। হাতে আমার কালো ব্যাগ, গায়ে ছাপোষা কালো কোট, সাদা জামা, কালো প্যান্ট। টাই টা ঢিলে হয়ে ঝুলছে গলায়। স্টেশনের দরজা দিয়ে ঢুকছি, হঠাৎ একটা ধপাস করে শব্দ। একটু এদিক ওদিক তাকিয়ে মনে হোলো শুধুই আমি যেন শব্দটা শুনলাম, বাকি কারু কোনো হেলদোল নেই। মাথা না ঘামিয়ে হুড়মুড়িয়ে এক নাম্বার প্লাটফর্মের দিকে এগোতে লাগলাম। হঠাৎ এক ভদ্রলোক, আমাকে এমন ধাক্কা মেরে ডানপাশের সিঁড়ির দিকে ছুটলো, আমার ডান পায়ের জুতোর ফিতে টা খুলে গেলো। ফিতে টা লাগিয়ে সবে এগোতে শুরু করেছি, হঠাৎ মনে হোলো, লোকটা ঠিক যেন আমার মত দেখতে ছিল। গায়ে সাদা জামা, কালো প্যান্ট, অবশ্য কোট-টাই নেই। ফিরে তাকালাম সিঁড়ির দিকে। লোকটা ততক্ষণে সিঁড়ির অর্ধেকটা উঠে গেছে। ঠিক আমারই মত একটা কালো ব্যাগও তার হাতে। সেটা খুলে কি যেন হাতড়াচ্ছে সিঁড়ির মাঝপথে দাঁড়িয়ে।
 
কানে এলো গাড়ির অ্যানাউন্সমেন্ট, 'কৃপয়া ধ্যান দে, কলকত্তা সে হোকর বর্ধমান কো জানে ওয়ালি সাওয়ারি গাড়ি তিন নম্বর প্লাটফর্ম পর আ রহি হেয়'। তিন নাম্বার, সে তো ওভারব্রীজ ক্রস করে যেতে হবে! অনেকটা পথ রোদ গরমে এসেছি, তাই একটু চোখে মুখে জল দেওয়ার জন্য ওয়েটিংরুমের বাথরুমে ঢুকলাম। ট্যাপটা খুলতেই তীব্র বেগে জলের ধারায় আমার চোখ মুখ কোট সব ভিজে গেলো। তাড়াহুড়োর মধ্যে একটু বিরক্ত হয়েই টাই আর কোটটা খুলে ব্যাগে ভরে নিলাম। তারপর হাত মুখ টা ভালো করে ধুয়ে, পকেট থেকে রুমাল বের করে মুখটা মুছছি, ওমনি, ট্রেন ঢোকার শব্দ কানে আসতেই, ছুট লাগালাম। ওয়েটিং রুম থেকে বেরোতেই কানে এলো একটা ডাক, 'এই যে, কি করছেন'। শব্দটা ওভারব্রিজ থেকে আসছে মনে হোলো তাই ওপরের দিকে চোখ তুলতেই চোখে পড়লো, এক ভদ্রলোক নীল রঙের একটা গেঞ্জি পরে ওভারব্রীজের রেলিং এর ওপর দাঁড়িয়ে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই, রেলিং থেকে শূন্যে ভেসে পড়লো তার দেহ। তিন নম্বর প্লাটফর্মে ঢুকতে থাকা ট্রেনের মাথার ওপর আছড়ে পড়লো, আর জোরে একটা শব্দ, 'ধপাস',।
কি, কেন এসব প্রশ্নের কৌতুহল টা সামলে ট্রেন ধরার জন্য ছুট লাগালাম। স্টেশনের গেটের মুখে প্রায় একজন ভদ্রলোককে ধাক্কা দিয়ে ডানপাশের ওভারব্রিজের সিঁড়ির দিকে এগোতে লাগলাম। হঠাৎ, মূহুর্তের মধ্যে মাথায় খেলে গেলো ওভারব্রীজের রেলিঙে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটার মুখটা, ঠিক যেন আমি। আর গায়ের গেঞ্জি টা, ওটা তো আমারই, এখনো ব্যাগেই আছে। একবার ফিরে যাবো ভেবে নিচের দিকে ঘুরতেই দেখি যে কালো কোট পরিহিত ভদ্রলোক কে এই মাত্র ধাক্কা দিয়ে এলাম সে নিজের জুতোর ফিতে বাঁধছে। এর মধ্যে ট্রেন ছাড়ার শব্দ। হুড়মুড়িয়ে ব্যাগটা খুলে দেখলাম, ঠিক, নীল গেঞ্জি টাই তো এনেছি আজ। এখনো ব্যাগেই রয়েছে।
 
না ট্রেন ছাড়ছে, ছুটতে হবে। এবার ছুট্টে ওভারব্রীজের ওপরে উঠেই তাক লেগে গেলো। নীল গেঞ্জি পরে লোকটা এখনো দাঁড়িয়ে রেলিঙের ওপর। না, এখনো বাঁচানো যাবে ভেবে ছুটে লোকটার দিকে এগোতে এগোতে চিৎকার করলাম, 'এই যে, কি করছেন'। আমার চিৎকার শুনে লোকটা আমার দিকে তাকাতেই টাল সামলাতে না পেরে রেলিঙের ওপর থেকে,... ধপাস। আমি কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে এদিক ওদিক তাকাতেই দেখি নীচে প্লাটফর্ম থেকে লোকজন আমার দিকে তাকিয়ে, কেউ কেউ আঙুলও দেখাচ্ছে আমার দিকে। এবার একটু ভয় লাগছে। লোকজন আমাকে দোষী ভাবছে না তো! ওভারব্রীজের একটা কোণ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে চট করে জামাটা বদলে নীল গেঞ্জি টা চাপিয়ে নিলাম গায়ে আর ব্যাগটা সন্তর্পণে ওই কোণ ঘেঁষেই নামিয়ে দিলাম।
 
হঠাৎ চোখে পড়লো, দুজন পুলিশ আমার দিকে এগিয়ে আসছে। ভয়ে আমার জিভ শুকিয়ে এসেছে। আমার কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো, 'একজন সাদা জামা পরা লোক দাঁড়িয়ে ছিল এখানে, হাতে কালো ব্যাগ, কোন দিকে গেলো দেখেছেন কি'! আড়ষ্ট জিভ নেড়ে আমতা আমতা করে বোল্লাম, 'ওই তো তিন নম্বর প্লাটফর্ম এর দিকে যেতে দেখলাম'। আমি দেখেছি শুনে ওদের চোখ জ্বলে উঠলো, 'দেখেছেন, দেখলে চিনতে পারবেন?' এর মধ্যে আমার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে , যা করছি যা বলছি কিছুতেই আমার আর কন্ট্রোল নেই। আর এবার বলে ফেল্লাম, 'হ্যাঁ পারবো না কেন, দিব্যি দেখলাম আমার চোখের সামনে দিয়েই তো চিৎকার করতে করতে গেলেন।' এসব শুনে আমাকেও ওরা সাথে নিল। ওভারব্রীজের মাথায় এসে আমাকে ওরা বোল্লো, 'আমরা দুজন প্লাটফর্মে যাচ্ছি, আপনি এই রেলিঙের ওপর উঠে দেখুন তো ওনাকে দেখতে পান কি না। দেখলেই আমাদের ইশারা করবেন।' আমি সাবধানে রেলিঙের ওপর উঠলাম। প্লাটফর্মে চারিদিকে চোখ ঘোরাতে লাগলাম, আমি যেন আমাকেই খুঁজছি চারিদিকে, কিন্তু কই দেখছি না তো।
 
আবার হঠাৎ অ্যানাউন্সমেন্ট, 'কৃপয়া ধ্যান দে, কলকত্তা সে হোকর বর্ধমান কো জানে ওয়ালি সাওয়ারি গাড়ি তিন নম্বর প্লাটফর্ম পর আ রহি হেয়'। আর এটা শুনেই মাথার মধ্যে একটার পর একটা ঘটনা লুপের মত ভেসে উঠতে লাগলো। ধাক্কা, জুতোর ফিতে খোলা, বাথরুমে জলে ভিজে কোট খুলে রাখা, রেলিঙের ওপর নীল গেঞ্জি পরা লোক, ব্যাগ খুলে হাতড়ানো সবেতেই যেন আমি। মাথায় এসব পোকামাকড়ের মত ঘিনঘিন করছে, হঠাৎ ট্রেন ঢোকার শব্দ কানে এলো। আর সাথে একটা চিৎকার, 'এই যে, কি করছেন'। ঠিক যেন আমারই গলা। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি সেই লোকটা, যাকে খুঁজছি এতক্ষণ তন্নতন্ন করে, সাদা জামা, হাতে কালো ব্যাগ। প্লাটফর্ম নাম্বার তিনে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশদের ইশারা করতে হাত তুলতে গিয়েই বেসামাল। তারপর শূন্যে ভেসে গেলো আমার নীল গেঞ্জি পরা শরীরটা, আর চলমান ট্রেনের মাথার ওপর গিয়ে ধপাস করে পড়তেই, গা হাত পায়ে ঝাঁকুনি দিয়ে হুড়মুড়িয়ে উঠলাম। হাতে এখনো ধরা সায়েন্স ফিকশনের বই, টাইম লুপ।

Saturday, February 27, 2021

সন্ধ্যাতারা

আমি আজও শব্দ খুঁজি,
ভাবনা গুলো সাজিয়ে রাখি গিঁটে,
তুমি শূন্যে তাকিয়ে থেকো,
কবিতা হয়ে ফুটবো তোমার ঠোঁটের পাপড়িতে।

আমি আজও গল্প লিখি,
রাত জাগা ঘুম চোখ বেয়ে কালসিটে,
তুমিও দুটো গল্প বলো,
আনমনে ডুব দেবো তোমার চোখের চাহনিতে।

আমি আজও উপভোগ করি
কেক পায়েস মাংস আহারে, নৈশভোজের ট্রিটে,
তুমিও নাহয় অংশ নিয়ো উদযাপনে,
গা এলিয়ো সান্তা হয়ে রোজ রাত্তিরে আমার ক্রিস্টমাস ট্রিতে।

আমি আজও রাস্তা হারাই,
একলা পথে পাড়ি দিয়ে যাই নীরবে নিভৃতে,
তুমি পারলে একটু হেসো,
সন্ধ্যা তারায় খুঁজে তোমায়, পথ হারাবো মনের শান্তিতে।

Wednesday, February 10, 2021

চন্দ্রমল্লিকা

যদিও শীতকালে ঝপ করে সন্ধ্যে নামে, আজ এখনো সন্ধ্যে নামতে বেশ খানিকটা সময় আছে। সবে সূর্যের বুকে লালিমা দেখা দিতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে আরেকবার নিজের ফুলবাগানের তদারকি করে নিচ্ছে সুমনা। রঙ বেরঙের গোলাপ, ডালিয়া, চম্পা, প্যানসি, জিনিয়া তে ভরপুর এই বাগানটা সুমনা আর সুজন একসাথে হাতে হাত মিলিয়ে গড়ে তুলেছিল, সে প্রায় বিশ বৎসর আগে, আর সাথে সংসারটাও। সূর্যের লালাভ আলোয় সুমনাকে নাকি সোনালি চন্দ্রমল্লিকার পাপড়ির মত দেখায়। তাই বাগানের একপাশে, সন্ধ্যে নামলে যেখানে সূর্যের আলো শেষ বারের মত আঙুল বুলিয়ে যায়, সেখানে শুধু চন্দ্রমল্লিকার স্থান। রোজ সন্ধ্যে হলে সুমনাকে এই ফুলগুলোর মাঝে বসিয়ে মন ভরে দেখতো আর হারিয়ে যেত সুজন। এখন নিজের হাতে সমস্ত বাগানটা সামলে রেখেছে সুমনাই, আর সাথে সংসারটাও।

অন্ধকার নামতে দেখে, আজকের মত শেষ বার চন্দ্রমল্লিকাগুলোর বুকে হাত বুলিয়ে ঘরে ঢুকে পড়লো সুমনা। 'সুমনা, হয়ের ইস মাই ফ্লোরেসেন্ট ব্লু টাই! আই নিড ইট, ইটস অ্যান ইমপর্ট্যান্ট ক্লায়েন্ট মিটিং, অ্যা বিগ বিগ ওয়ান'। সুজনের এমন দাবিদাবায় সুমনা এখন অভ্যস্ত। 'দিচ্ছিইইই', বলে বেডরুম থেকে ফ্লোরোসেন্ট ব্লু টাই এনে সুজনের হাতে ধরিয়ে দিতে দিতে জিজ্ঞেস কোরলো, ' ডিনারে কি খাবে আজ!'। টাই-টা গলায় জড়াতে জড়াতে, 'উই হ্যাভ অ্যা বিজনেস ডিনার টুনাইট উইদ আওয়ার ফরেইন ক্লায়েন্টস, সো ওয়েট কোরো না, খেয়ে নিয়ো, আই মাইট বি লেট', বলে দরজার দিকে পা বাড়ালো সুজন।

সে প্রায় পঁচিশ বছর আগের কথা যখন সুমনা সুজনের কোম্পানি তে ট্রেইনি হিসেবে জয়েন করে। বেশ সুন্দর দেখতে ছিল সুমনাকে। টানা টানা চোখ, নির্মল হাসি, আর তার সাথে বুদ্ধিদীপ্ত চালচলন ও প্রাণবন্ত স্বভাবের জন্য খুব সহজেই মন জয় করে নিতে পারতো। মিশুকে, স্মার্ট এবং অফিসিয়াল ম্যাটার সামলাতেও বেশ দক্ষ হওয়ায় দ্রুত উন্নতিও করতে থাকে। তার উন্নতি চোখ এড়ায়নি কোম্পানির হর্তাকর্তাদের। অগত্যা কিছুদিনের মধ্যেই সুজনের আন্ডারে একটা বড় প্রোজেক্টের লিড হয়ে যায় সুমনা। সেই প্রোজেক্টের সাক্সেস পার্টি তে, আজকের দিনেই নাটকিয় ভাবে হলভর্তি লোকের সামনে হাঁটু মুড়ে, হাতে গোলাপ আর ডাইমন্ড রিং নিয়ে সুমনা কে প্রোপোজ করেছিল সুজন, ঠিক একুশ বছর আগে। আর তার ঠিক একবছর পর, টু মেক দি ডে মেমোরেবল, প্ল্যান করেই আজকের দিনে সাত পাকে বাঁধা পড়েছিল তারা।
এখন সুজন বড্ড কেরিয়ার সেন্ট্রিক, শুধু সাক্সেস আর সাক্সেস। সারাক্ষন সাক্সেস এর পেছনেই ছুটে চলেছে। আর সৌভাগ্যক্রমে এখনো অবধি ফেলিওর এর মুখ দেখতে হয়নি তাকে। তাই সুমনার জন্যও তার কাছে আর সময় নেই। হয়তো তখন সুমনাও তার জন্য একটা অ্যাচিভমেন্টই ছিল মাত্র, যেটাকে ভালোবাসা ভেবে ভুল করেছিলো সুমনা। বিয়ের দুবছরের মাথায় সংসারের জন্য চাকরি ছাড়ার পর তার আর নিজের জন্য বাঁচা হয়ে ওঠেনি। সব কিছু মেনে নিয়ে নিজের মত করে নিজেকে, নিজের ভালোলাগা গুলোকে বাঁচিয়ে রেখেছে সুমনা। সময় মত নিজের ভালোলাগার বাগানে রোদ জল বাতাস নিজের মত করেই খেলিয়ে নেয় সে।

ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে টেলিফোনটা ডায়াল করলো সুমনা, 'হ্যালো, ইস দিস দি গ্রিন চিলিস মাল্টিকুইসিন রেস্তোরাঁ!... ওকে, ক্যান ইউ প্লিজ সেন্ড মি দি শেফস স্পেসাল ইন্ডিয়ান কুইসিন ইউ হ্যাভ ইন নন-ভেজ উইথ দি বেস্ট অ্যাভেলেবল ব্রেড উইদ অ্যা পিঞ্চ অফ বাটার।... থ্যাংকস, প্লিজ নোট মাই অ্যাড্রেস....'। অর্ডারটা আসতে সময় লাগলো ঘন্টাখানেকের কিছু বেশীই। তার মধ্যে, পরিপাটি করে লাল বেনারসি পরে, লাল টিপ আর লিপস্টিপ লাগিয়ে, গায়ে সুগন্ধি ছড়িয়ে, বিশ বছর পুরোনো ওয়াইনের বোতলটা ডাইনিং টেবিলে নামিয়ে রাখলো সে। ডাইনিং টেবিলের মধ্যেখানে একটা ক্যান্ডেল জ্বালিয়ে দিতেই মিটমিটে একটা সোনালী আলোয় ঘরটা মায়াবী হয়ে উঠলো। এভাবে নিজের সাথে নিজেই সেলিব্রেট করতে শিখে গেছে সুমনা, অনেক বছর হোলো।

দরজার বেল বাজলো, খাবার এসে গেছে হবে, এই ভেবে, দরজার দিকে এগিয়ে গেলো সুমনা। দরজা খুলতেই চমকে উঠলো সে। সুজন দরজার বাইরে হাঁটু মুড়ে, হাতে একগোছা চন্দ্রমল্লিকা নিয়ে বসে। সুমনার দিকে ভেজা ভেজা দৃষ্টিতে তাকিয়ে, কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠলো, ' উইল ইউ বি মাই ভ্যালেন্টাইন ফর দি রেস্ট অফ আওয়ার লাইফ!' সুজনের এহেন কাতর মিনতিপূর্ণ গলা আর ছলছল চোখ সুমনার একদম অচেনা। সুজনদের কোম্পানি ব্যাঙ্করাপ্ট ঘোষণা করা হয়েছে। আজকের মিটিঙের সাক্সেসের ওপর টিকে ছিলো সমস্ত আশা। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। ঘরের টিমটিমে মায়াবী আলোয় যেন সমস্ত সুখ দুঃখ, চাওয়া পাওয়া, সাক্সেস ফেলিওর এক ধাক্কায় মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে। এক সোনালী ভবিষ্যতের অঙ্গীকার নিয়ে আবার হাতে হাত রেখে চলার স্বপ্ন দেখার শুরু সেদিনের খাবার একসাথে ভাগাভাগি করে খাওয়া দিয়ে। সাথে তাদের বিয়েতে পাওয়া ওয়াইনের গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে আবার নতুন করে সোনালী চন্দ্রমল্লিকায় হারিয়ে যেতে লাগলো সুজন।

Tuesday, February 9, 2021

মাফ করিনি আজও

বোতলবন্দী সময়, ঝাঁকানি তে ডাঁয়েবাঁয়ে সুড়সুড়ি,
একটানে ঝুলে পড়তে পারে, আসমানে মাথা দেখানো ঘুড়ি।
তালেব্য-শ নিয়েও রুচি নেই মুখে, যারা কাটে পেট,
তোমার জমিনে বানানো দালান, তারা তোমায় করছে ভেঁট। 

শিহরণ জাগে! গল্পে, গাছে ওঠে গরু!
মেপে দেখ সময় গড়ালো কি না,
রাস্তা গড়ে, এতটা পথ একলা, সরু -
বাঁচা যাবেনা তোমাদের বিনা।
 
সবুজ বনানী, সোনালী ধানক্ষেত, লোহা ইঁট কংক্রিটেও তুমি কেটেছো ফিতে,
অপদার্থের ট্যাগ ঝোলানো তোমার খাঁজ কাটা জুলপিতে।
তুমি নাকি আগডুম খেলো, রোমে বার্মায় ছিন্নমস্তা সাজো,
তুমি মিশরের পিরামিড হয়ে গেছ জানি, তবুও মাফ করিনি আজও।

Saturday, February 6, 2021

ইন্টার্নাল

রক্তেও যার নড়েনি বিবেক, সেও টুইটিয়েছে কাল!
অন্দরমহলে ঘোর ঘেরাটোপ ম্যাটার ইনটার্নাল।
মাথার ওপর অঙ্গুলি লেহনে অবস হয়েছে ঘিলু,
গ্রে ম্যাটারে টান পড়ছে,
সিস্টেমেটিক্যালি বোকা বানানোর প্রিলুড।

সুদূর প্রবাসে এক নিশ্বাসে কাটিয়ে এসেছো ছুটি,
দল বেঁধে তার শোনো হাহাকার, বিকিয়েছে রুজি রুটি।
তোমার আমার দায়বদ্ধতা চাপা পড়ে আছে ট্রামে,
তবুও নতুন সূর্য উঠবে ঝরে পড়া রক্ত ঘামে।

Thursday, December 31, 2020

ঘুম

সদ্য ঘুম ভেঙে চোখ কচলাতে কচলাতে বিছানা থেকে মাটিতে পা ফেলতেই টের পেলাম পা দুটো অসাড়। মাটিতে পা ফেলে হেঁটে ওয়াশবেসিনের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে টুথব্রাশটা হাতে তুলে নিতে নিতে বুঝলাম, হাতটাও। কিন্তু এইমাত্র যে চোখ কচলালাম, দিব্যি হাতটা ফিল করলাম মুখের ওপর! ঘুমের ঘোরে ব্যাপারটাকে পাত্তা না দিয়ে, মুখে একঝাপটা জল মারতেই শিরদাঁড়া বেয়ে ঠান্ডা স্রোত খেলে গেলো। একফোঁটা জলও অনুভব করলাম না আমার চোখ, গাল, থুতনি কোত্থাও। পাগলের মত জলের ঝাপটার পর ঝাপটা মারতে লাগলাম মুখে, নাহ কিচ্ছু টের পাচ্ছি না। হুড়মুড়িয়ে আবার চোখ কচলানোর ভঙ্গিতে চোখে মুখে হাত বোলাতে যাবো, হঠাৎ চোখ পড়লো সামনের আয়নায়। আয়নায় আমার প্রতিফলন কই!
 
দুই হাত কখন যে চোখ, মুখ, নাক ঘুরে মাথায় উঠে গেছে টেরই পাইনি। ভয়ে বুকটা ধড়ফড় করছে, নাভিশ্বাস উঠছে টের পাচ্ছি। একটা ফোন করতে হবে। ছুট্টে বেডের ওপর রাখা আমার মোবাইলটা নেওয়ার জন্য বিছানার দিকে মুখ ফেরাতেই চোখে পড়লো, আমার বিছানায় ঠিক আমার মত একজন শুয়ে, হাত দুটো চোখ কচলানোর ভঙ্গিতে, ঠিক যেন ঘুম থেকে উঠে চোখ কচলাতে কচলাতে আবার শুয়ে পড়েছে।

Saturday, December 26, 2020

এবং

আমি এবং,
মেঘের বুকে গল্প গড়া, বর্ষা না-নামা চিঠি,
শীতের সকালে ঝরে পড়া, কুয়াশার নাম না লেখা অবয়বে,
জানলার ওপর ঝাপসা হতে থাকে দিন দিন তার পুঙ্খানুপুঙ্খতা।
 
আমি এবং,
আমার সবুজ ঘাসে ভেজা মাঠ,
লুটোপুটি খাওয়া, বাধ না মানা,
আবেগঘন সন্ধ্যার বুকে তোমার চোখটিপে হাসা,
সূর্যাস্তের নীলিমা মাখা অন্ধকারে আজও ভাস্বর।
 
আমি এবং,
আমার পাখিডাকা, গাছের নীচের ছায়া,
দিগন্তব্যাপি চরাচর বেয়ে হাত বোলানো রোদ জল কাদা মাখা আমাদের সকাল দুপুর সন্ধ্যের কলকাকলি,
ভীড় রাস্তা, বাস ট্রাম, জনজোয়ারের ভীড় ঠেলে আজও ভাটিয়ালি গায়।
 
আমি এবং,
আমার লেপমুড়ি দেওয়া ভোর,
রোজ সকালে কুয়াশা মাখি, রৌদ্রস্নান করি,
কুয়াশা ভেজা মেঘের পাল্লার বুকে আঁচড় কাটি,
লেপমুড়ি ভাঙা রৌদ্রস্নানে আজও তার ছোঁয়া,
অভিমানি জ্যোৎস্না মাখা নিশুতি রাতে আজও ঠাঁই, পাহারাদার। 
 
শেষ সম্বল টুকু দিয়ে আঁকড়ে ধরা জানালার পাল্লা, ঘাসের ডগা, মোলায়েম পাতার বুক বেয়ে ঝরে পড়ার আগেও বলে যাওয়া,
যে কাল গেছে তা গেছে,
সামনের আঁকাবাঁকা গলিপথ বেয়ে যে অদূর ভবিষ্যৎ,
তা তোমার, তা আমার, এবং....।