১৯৯৮, স্কুলে যাওয়ার পথে লোকজনের কানাঘুষো শুনছি, এবারও ব্রাজিল। তখন থেকে বুঝেছি, ফুটবল বিশ্বে যতগুলোই দেশ থাক না কেন, ভারতের ফুটবল প্রেম পোলারইজড, পেলে আর মারাদোনার দলে। সে বছর অবশ্য জিনেদিন জিদানের জাদুতে ব্রাজিলকে ফাইনালে ধূর্মুশপেটা করলো ফ্রান্স। বুঝতে দেরি হয়নি, সমাজ, লোকজনের পোলারাইজেশন এর বাইরেও আরো অনেকটা বড়, আরো অনেক কিছু নিয়েই বাস্তব। এভাবেই আমার ফুটবলের ধারণা, অন্যান্য সব রকম ধারণা গড়া শুরু।
এরপর আমার ফুটবল খেলার দিনের শুরু। চুটিয়ে খেলেছি, রোদ, ঝড়, বৃষ্টি, মাঠের শক্ত মাটি, কাকঁড়, সব উপেক্ষা করেই খেলেছি। ওই ছোট্ট বয়সেও নিয়মিত ভাবে, স্ট্রাইকার হিসেবে খেলি, রাইট উইং এ খেলি, মাঝমাঠেও খেলি। আমার চেয়ে অনেক বড় বড় ছেলেদের সাথে খেলি, গোল করি, অদম্য উৎসাহে তাদের সাথে পায়ে পা মিলিয়ে ড্রিবল করি, ট্যাকল করি।
২০০২ সালে আমার ফুটবল ধারনা অনেকটা পোক্ত। সেই বছরের বিশ্বকাপটার আমার কাছে অন্যতম, আমার দেখা প্রথম সম্পুর্ন বিশ্বকাপ বলা যায়। জাপান, সাউথ কোরিয়ার যৌথ আয়োজন, এশিয়ান দেশগুলোর ভালো প্রদর্শন, জমজমাট উত্তেজনা আর সর্বোপরি আবার ব্রাজিলের মাথায় তাজ। রোনাল্ডোর হিরোইজম, রোনালদিনহোর পায়ের জাদু, কার্লোসের বানানা কিক যেমন এখনো চোখের সামনে ভেসে ওঠে, সেরকমই ভেসে ওঠে মাইকাল বালাক, অলিভার কান দের চেহারাগুলোও। সময়ের সাথে দেশ কাল নির্বিশেষে ফুটবল হিরোদের উদ্ভব দেখেছি, আবার অনেক আশা জাগিয়ে মিলিয়ে যেতেও দেখেছি অনেককে। আর বারবার নিজেকে প্রশ্ন করেছি, ভারত কবে এই দেশগুলোর সাথে বুক ঠুকে টেক্কা দেবে। সে ইচ্ছা আমার পূর্ণ হয়নি আজও।
টেক্কা দেওয়া ভালো তবে সেটা সঠিক সময়ে, আর সঠিক ময়দানে। স্পেন, ইটালি, ফ্রান্স কে ভারত ফুটবলে টেক্কা দেবে এই আশা নেই, কিন্তু আজ ভারত যে ময়দানে এদের টেক্কা দিতে চলেছে, তা মোটেই যাচিত নয়। হ্যাঁ ঠিক বুঝেছেন, করোনা আক্রান্তের সংখ্যা যে রেটে এক সপ্তাহে ভারতে বেড়েছে, তা ইটালি, চিন, স্পেন কে পিছনে ফেলেছে। এভাবে বাড়তে থাকলে, আমাদের দেশের জনসংখ্যা আর মেডিকেল ইনফ্রাসট্রাকচারের কথা ভেবে বলতে বাধ্য হচ্ছি, আক্রান্তের সংখ্যায় যতটা এগিয়ে, মৃতের সংখ্যায় আরও কয়েকগুন এগিয়ে যাব সন্দেহ নেই। ফুটবল মাঠে জেতাটা অনেক সহজ, মাত্র এগারো জনকে দলবদ্ধ ভাবে খেলতে হয়, আর এখানে গোটা দেশ, গোটা বিশ্ব, নানান মানুষ, নানান পরিস্থিতি, একটা নয়, হাজার হাজার কোচ, হাজার হাজার পদ্ধতি!
ফুটবল ময়দানে জিততে গেলে যেভাবে ডিফেন্সকে আঁটোসাটো করতে হয়, দলবদ্ধভাবে অপোজিশনের সামনা করতে হয়, আমাদেরও তাই করতে হবে। আমি কিছু সময় ডিফেন্সেও খেলেছি, বন্ধু মহলেই। হলফ করে বলতে পারি, ডিফেন্ডারের দায়িত্বটা অনেক অনেক বেশি। বন্ধু মহলে খেলেও নিজের দোষে দল হারলে, রাত্রে ঘুম হোত না। এত বড় একটা দেশ, প্রায় দেড়শ কোটি লোকের দায়িত্ব, হারলে আর শান্তিতে ঘুমোতে পারবেন কি! মনে রাখবেন, একজন দুর্বল ডিফেন্ডার পুরো দলটাকে হারিয়ে দিতে পারে। আর সেই দুর্বল ডিফেন্ডার হয়তো আপনি নিজেই। এত্ত বড় একটা হারের দায়িত্ব নিজের ঘাড়ে নিতে পারবেন তো, পারবেন তো ইটালির মত কফিন মোড়া রাস্তা বেয়ে দিব্যি হেঁটে যেতে, যেভাবে এখন যাচ্ছেন! আপনি রোনাল্ডোর মত হিরো হতে চান নাকি বালাকের মত, হয়তো বা ফাইনাল না খেলেই হারের তকমা নিয়ে বিদায় নেবেন তা সম্পুর্ণ আপনার হাতে, আমাদের সবার হাতে।
No comments:
Post a Comment