মাংসটা তখনো আধসেদ্ধ, এই মাত্র প্রথম সিটিটা পড়েছে। গরম ভাতটা নামিয়ে,
টিভিটা চালিয়ে একটু বসলো রূপালি। বাইরের গুমোট মেঘলা ভাবটা কাটিয়ে মৃদু
ঠান্ডা হাওয়া বইছে, আশেপাশেই কোথাও বৃষ্টিটা হয়ে গেলো বোধ হয়। আজ রবিবার,
সকাল সকাল বাজারটা সেরে পলাশ বেরিয়েছে প্লাম্বার ডাকতে, তাদের বাথরুমের
পাইপ বেয়ে চুইঁয়ে জল পড়ছে বেস কয়েকদিন থেকেই। চ্যানেল উল্টেপাল্টে দেখতে
দেখতে হঠাত্ চোখটা আটকে গেল একটা লোকাল নিউজ চ্যানেলে। তাদের পাডার মোড়
পেরিয়ে আধ ক্রোশ দুরের হাইওয়ের ওপর ভয়াবহ দুর্ঘটনা। মাঝবয়সী এক সুঠাম
যুবকের ওপর চডাও হয়ে পিটিয়ে খুন করে পলাতক, লোকাল কিছু গুন্ডা।
পুলিশসূত্রের খবর অনুযায়ী, এখনও লাশ সনাক্ত করা যায়নি।
বাইরের ঠান্ডা বাতাশের সাথে ঝিরিঝিরি বৃষ্টিও শুরু হয়েছে। আবহাওয়া ক্রমে শীতল হলেও এরই মধ্যে রূপালির কপালে ঘাম জমেছে। প্রায় ঘন্টা দুয়েক হয়ে গেল পলাশ বেরিয়েছে, এতক্ষণে তো ফিরে আশার কথা। একটু অধৈর্য ও চিন্তান্বিত হয়েই পলাশের ফোন নাম্বারটা ডায়াল করলো রূপালি। "আপনি যে নম্বরটিতে কল করেছেন সেটি এই মুহূর্তে হয় সুইচড অফ অথবা পরিষেবা সীমার বাইরে। অনুগ্রহ করে কিছুক্ষণ পরে চেষ্টা করুন।" তারপর প্রেশারকুকারে কটা সিটি পড়েছে তা আর গোনা হয়ে ওঠেনি রূপালির। দশ পনেরো মিনিটের মধ্যে প্রায় পঞ্চাশবার পলাশের নাম্বারটা লাগানোর চেষ্টা করেছে।
আবার টিভির সামনে গিয়ে মুখ গুঁজে বসলো রূপালি। বাইরে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি ছাপিয়ে এখন চড়াম চড়াম বাজ পড়ছে। মাস চারেক আগে বাজ পড়েই তাদের বাড়ির টিভিটা নষ্ট হয়ে যায়। আর সেদিনই বাজপড়ে মারা যায় তাদের পোষা মিরাক্কেল। তারপর থেকেই তাদের ঘরের অলিখিত নিয়ম, মেঘ দেখলেই টিভি বন্ধ করতে হবে আর বাইরে বেরোনো যাবেনা। আজ পলাশ আর রূপালি দুজনেই নিয়ম ভাংলো। আজ আর টিভি বন্ধ হোলো না। হুড়মুড়িয়ে সেই লোকাল চ্যানেলটা খুলতেই দুম করে কারেন্ট চলে গেল। এলোমেলো হাওয়ায় জানালার পাল্লাগুলো ঝনঝন করছে, সাথে প্রেশারকুকারে আরেকটা সিটি। চারিদিকে অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছে আর তার সাথে রূপালির মনে চিন্তার মেঘ ও।
'মাকে একটা ফোন করি!' মনে মনে ভাবছে রূপালি। ' না না, এখনি ফোন করা ঠিক হবে না, আরো কিছুক্ষণ দেখি'। বেশ খানিকটা সময় পেরিয়ে গেছে, সিটি গোনা হয়নি, কুকারটা পাশে নামিয়ে ওভেনটা বন্ধ করলো। তারপর আবার পলাশের নাম্বারটা চেষ্টা করতে গিয়ে দ্যাখে, ফোনটা ডেড। মনে মনে প্রচন্ড রাগ হোলো পলাশের ওপর, 'কতবার বলেছি বাড়ির জন্য একটা মোবাইল ফোন কিনতে, সময়ে অসময়ে ফোন ডেড হয়ে পড়ে থাকে।' এইতো মাসখানেক আগের কথা, পলাশ তখন হপ্তাখানেকের জন্য অফিসের কাজে বাইরে। রাত প্রায় সাড়ে দশটা, হঠাৎ রূপালির বুকে ব্যাথা শুরু হয়। কি করা উচিৎ বুঝতে না পেরে ফোন করে পলাশকে। কিছু বোলে ওঠার আগেই ফোনটা কেটে যায়, তারপর ফোন ডেড। এন্টাসিড খেয়ে রূপালি ঘুমিয়ে পড়ে সেদিন, পরেরদিন তার ঘুম ভাঙে কলিং বেলের আওয়াজে, বাইরে পলাশ দাঁড়িয়ে। চাকরিটা সে যাত্রায় বেঁচে গেলেও তার জন্য কম খেসারৎ পোহাতে হয়নি পলাশকে।
রাগ ছাপিয়ে ভর করলো চিন্তা, 'না এভাবে তো বসে থাকা যায়না '। ছাতাটা হাতে তুলে নিয়ে, দরজা খুলতে যাবে ওমনি কানে এলো, জোরে জোরে কে যেন দরজা ধাক্কাচ্ছে, অনবরত, জোরে আরো জোরে, যেন পুষে রাখা রাগ অভিমান যন্ত্রণা ঘৃণা আছড়ে পড়ছে কারুর। ভয় লাগতে লাগলো রূপালির। এই ঝড় বৃষ্টি বাজের মধ্যে এভাবে কে, কেন দরজা ধাক্কাচ্ছে, পলাশও বাড়িতে নেই! 'নাহ্ দরজাটা খুলতেই হবে, পলাশের খোঁজটা করতেই হবে, ভয় পেলে চলবে না।' এবার ভয়কে ছাপিয়ে গেলো উদ্বেগ।
দরজা খুলতেই, সামনে দাঁড়িয়ে আধভেজা পলাশ। পলাশ কিছু বলতে যাওয়ার আগেই গর্জে উঠলো রূপালি, 'এভাবে কেও দরজা ধাক্কায়, একটা কলিং বেল বলেও বস্তু হয়। আর ছিলে কোথায় এতক্ষণ, ফোনও বন্ধ। একটা ফোনও তো করে দিতে পারতে, দেরি হবে যখন।' না এরপর আর পলাশ কিছু বলার সুযোগ পায়নি, কেউ পায়না। দৃষ্টির বাইরে, উলটো দিকটায় কি হচ্ছে কেও জানার চেষ্টা করে না। পলাশ মুখ খুলতে যেতেই নিজের মাথাটা পলাশের বৃষ্টিভেজা বুকে গুঁজে দিয়েছিল রূপালি। তারপর ঠান্ডা ভাত আর প্রায় গলে যাওয়া মাংসের ঝোলের যে স্বাদ সেদিন তারা পেয়েছে, তা বোলে বোঝানোর অপেক্ষা রাখে না।
হাইওয়ের দুর্ঘটনায় পথ অবরোধের জেরে আটকে পড়েছিল পলাশ। তারপর মেঘ বৃষ্টি বাজ শুরু হতেই অবরোধ উঠে যায়। আধভেজা হয়ে বাড়ি ফেরে। কলিং বেল বাজায়, কারেন্ট নেই। ফোন করে, ফোন ডেড। তারপর প্রায় আধা ঘন্টা ধরে দরজা ধাক্কাচ্ছে পলাশ, চিন্তায় ভয়ে হাত পা ঠান্ডা, রগ শক্ত হয়ে এসেছিলো তার। শুধু লোকজন জড়ো করে দরজা ভাঙাটাই বোধ হয় বাকি ছিল।
বাইরের ঠান্ডা বাতাশের সাথে ঝিরিঝিরি বৃষ্টিও শুরু হয়েছে। আবহাওয়া ক্রমে শীতল হলেও এরই মধ্যে রূপালির কপালে ঘাম জমেছে। প্রায় ঘন্টা দুয়েক হয়ে গেল পলাশ বেরিয়েছে, এতক্ষণে তো ফিরে আশার কথা। একটু অধৈর্য ও চিন্তান্বিত হয়েই পলাশের ফোন নাম্বারটা ডায়াল করলো রূপালি। "আপনি যে নম্বরটিতে কল করেছেন সেটি এই মুহূর্তে হয় সুইচড অফ অথবা পরিষেবা সীমার বাইরে। অনুগ্রহ করে কিছুক্ষণ পরে চেষ্টা করুন।" তারপর প্রেশারকুকারে কটা সিটি পড়েছে তা আর গোনা হয়ে ওঠেনি রূপালির। দশ পনেরো মিনিটের মধ্যে প্রায় পঞ্চাশবার পলাশের নাম্বারটা লাগানোর চেষ্টা করেছে।
আবার টিভির সামনে গিয়ে মুখ গুঁজে বসলো রূপালি। বাইরে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি ছাপিয়ে এখন চড়াম চড়াম বাজ পড়ছে। মাস চারেক আগে বাজ পড়েই তাদের বাড়ির টিভিটা নষ্ট হয়ে যায়। আর সেদিনই বাজপড়ে মারা যায় তাদের পোষা মিরাক্কেল। তারপর থেকেই তাদের ঘরের অলিখিত নিয়ম, মেঘ দেখলেই টিভি বন্ধ করতে হবে আর বাইরে বেরোনো যাবেনা। আজ পলাশ আর রূপালি দুজনেই নিয়ম ভাংলো। আজ আর টিভি বন্ধ হোলো না। হুড়মুড়িয়ে সেই লোকাল চ্যানেলটা খুলতেই দুম করে কারেন্ট চলে গেল। এলোমেলো হাওয়ায় জানালার পাল্লাগুলো ঝনঝন করছে, সাথে প্রেশারকুকারে আরেকটা সিটি। চারিদিকে অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছে আর তার সাথে রূপালির মনে চিন্তার মেঘ ও।
'মাকে একটা ফোন করি!' মনে মনে ভাবছে রূপালি। ' না না, এখনি ফোন করা ঠিক হবে না, আরো কিছুক্ষণ দেখি'। বেশ খানিকটা সময় পেরিয়ে গেছে, সিটি গোনা হয়নি, কুকারটা পাশে নামিয়ে ওভেনটা বন্ধ করলো। তারপর আবার পলাশের নাম্বারটা চেষ্টা করতে গিয়ে দ্যাখে, ফোনটা ডেড। মনে মনে প্রচন্ড রাগ হোলো পলাশের ওপর, 'কতবার বলেছি বাড়ির জন্য একটা মোবাইল ফোন কিনতে, সময়ে অসময়ে ফোন ডেড হয়ে পড়ে থাকে।' এইতো মাসখানেক আগের কথা, পলাশ তখন হপ্তাখানেকের জন্য অফিসের কাজে বাইরে। রাত প্রায় সাড়ে দশটা, হঠাৎ রূপালির বুকে ব্যাথা শুরু হয়। কি করা উচিৎ বুঝতে না পেরে ফোন করে পলাশকে। কিছু বোলে ওঠার আগেই ফোনটা কেটে যায়, তারপর ফোন ডেড। এন্টাসিড খেয়ে রূপালি ঘুমিয়ে পড়ে সেদিন, পরেরদিন তার ঘুম ভাঙে কলিং বেলের আওয়াজে, বাইরে পলাশ দাঁড়িয়ে। চাকরিটা সে যাত্রায় বেঁচে গেলেও তার জন্য কম খেসারৎ পোহাতে হয়নি পলাশকে।
রাগ ছাপিয়ে ভর করলো চিন্তা, 'না এভাবে তো বসে থাকা যায়না '। ছাতাটা হাতে তুলে নিয়ে, দরজা খুলতে যাবে ওমনি কানে এলো, জোরে জোরে কে যেন দরজা ধাক্কাচ্ছে, অনবরত, জোরে আরো জোরে, যেন পুষে রাখা রাগ অভিমান যন্ত্রণা ঘৃণা আছড়ে পড়ছে কারুর। ভয় লাগতে লাগলো রূপালির। এই ঝড় বৃষ্টি বাজের মধ্যে এভাবে কে, কেন দরজা ধাক্কাচ্ছে, পলাশও বাড়িতে নেই! 'নাহ্ দরজাটা খুলতেই হবে, পলাশের খোঁজটা করতেই হবে, ভয় পেলে চলবে না।' এবার ভয়কে ছাপিয়ে গেলো উদ্বেগ।
দরজা খুলতেই, সামনে দাঁড়িয়ে আধভেজা পলাশ। পলাশ কিছু বলতে যাওয়ার আগেই গর্জে উঠলো রূপালি, 'এভাবে কেও দরজা ধাক্কায়, একটা কলিং বেল বলেও বস্তু হয়। আর ছিলে কোথায় এতক্ষণ, ফোনও বন্ধ। একটা ফোনও তো করে দিতে পারতে, দেরি হবে যখন।' না এরপর আর পলাশ কিছু বলার সুযোগ পায়নি, কেউ পায়না। দৃষ্টির বাইরে, উলটো দিকটায় কি হচ্ছে কেও জানার চেষ্টা করে না। পলাশ মুখ খুলতে যেতেই নিজের মাথাটা পলাশের বৃষ্টিভেজা বুকে গুঁজে দিয়েছিল রূপালি। তারপর ঠান্ডা ভাত আর প্রায় গলে যাওয়া মাংসের ঝোলের যে স্বাদ সেদিন তারা পেয়েছে, তা বোলে বোঝানোর অপেক্ষা রাখে না।
হাইওয়ের দুর্ঘটনায় পথ অবরোধের জেরে আটকে পড়েছিল পলাশ। তারপর মেঘ বৃষ্টি বাজ শুরু হতেই অবরোধ উঠে যায়। আধভেজা হয়ে বাড়ি ফেরে। কলিং বেল বাজায়, কারেন্ট নেই। ফোন করে, ফোন ডেড। তারপর প্রায় আধা ঘন্টা ধরে দরজা ধাক্কাচ্ছে পলাশ, চিন্তায় ভয়ে হাত পা ঠান্ডা, রগ শক্ত হয়ে এসেছিলো তার। শুধু লোকজন জড়ো করে দরজা ভাঙাটাই বোধ হয় বাকি ছিল।