একটু বাজার গেছিলাম, বরফঢাকা শক্ত নোনা মাছ আর আড়ৎপচা সবজি হেব্বি সস্তায়
পেয়েছি, জমিয়ে ভুরিভোজ হবে আজ। না এর চেয়ে দামি আর তো কিছু দেখলাম না
বাজারে, লোকজনের ওপিনিয়ন ছাড়া। হ্যাঁ ঐতো রেডিও চালিয়ে তাসের বান্ডিল নিয়ে
বসে যারা একহাতে মাছি মারছে আর আরেক হাতে পাছা চুলকোচ্ছে, তাদের জন্য নাকি
বাজারে নতুন কিসব আসছে। কে যেন বলছিলো দুজনের সংসারে এমনিতেই খাওয়া জোটে
না, এরপর আবার নেশা করে বৌয়ের গায়ে হাতও তোলা যাবে না। বাইচান্স যদি
কান্নাকাটি করে ফ্যালে অমনি দুজন থেকে তিনজন থেকে চারজন এভাবে বাড়তে থাকবে
সংসার। পাশ দিয়ে যেতে যেতে যেটুকু বুঝলাম, ওরা যারা সংসারের জন্য গরুর মতো
খাটছে তাদের জন্য বীফ ব্যান এর মতো সুখবর আছে। তাই আমাদের মতো ছাগলদেরও
একটা প্রশ্ন আছে, কোন কোর্টে এফিডেভিট করে ছাগল থেকে গরু হওয়া যায় যদি একটু
বলতে পারেন খুব খুব খুব সুবিধে হয়।
উফফ, দুপুরের ভুরিভোজের পর শেষ
পাতে আরেকগুচ্ছ টক ঝাল মিষ্টি ওপিনিয়ন হলে মন্দ হয়না। গাছের ছায়ায় দড়ির
তাকিয়ে ফেলে রেডিওটা চালাতেই ঢিঞ্চকপূজার গান শুনে মন টা জুড়িয়ে গেল। ব্যাস
অমনি ঢিঞ্চকপূজার নাম শুনে তোমাদের মতো উড়নচন্ডী জ্ঞানীগুণীরা নিশ্চই
দাঁতে আঙ্গুল চেবাচ্ছো আর ভাবছো, কি চয়েস রে বাবা। বুক ফুলিয়ে বলতে পারি
'ইটস মাহহ চয়েস'। সবাই তো আর সোনু নিগম হতে পারে না, কিন্তু তা বলে কি গান
গাইবে না! সুতরাং ঢিঞ্চকপূজার গান যদি কারুর সকালের অ্যালার্ম টোন কিংবা
রাতে ঘুমোতে যাওয়ার সঙ্গী হয়, তাতে রোদ্দুর রায়ের পাকা দাড়িতে একটিও আঁচড়
পড়ার কথা নয়! খামোখা তোমরা নিজেদের ভাব ধারণার বাগানে হিরো আলম এর মতো
সৃষ্টিশীল মানুষদের টেনে এনে তাদের ভাবমূর্তিকে হেয় করো। তুমি ঋত্বিক,
সত্যজিৎ, মৃণাল প্রেমী হতে পারো, তা বলে কি কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়,
বিভূতিভূষণের ভুলটা শুধরে দিয়ে নিজের ছোটবেলার বুনিপ দেখার ইচ্ছেটা চাঁদের
পাহাড়ে পূরণ করতে পারবেন না! এটা কাঁহাকার ইনসাফ। হাজার হাজার মিমিক্রি
আর্টিস্টের ন্যাকামি, তোতলামি দেখে তোমরা হেসে লুটোপুটি খাবে, ইরফান আর
নওয়াজুদ্দিন এর অভিনয় দেখে 'ন্যাচারাল ন্যাচারাল' বলে চিৎকার করবে, অথচ
দেবের ন্যাচারাল তোতলামি তোমাদের চক্ষুশূল। এসব তো আর মেনে নেওয়া যায় না।
দেশ বিদেশের সমস্ত ছবি দেখার, গান শোনার অবকাশ কারই বা আছে বলতো। প্রীতম এর
মিউসিক আর রাজ্ চক্কোত্তির মুভির যুগলবন্দী যে দেশ কাল সংস্কৃতির সীমানা
মিটিয়ে দিচ্ছে তার জন্য একটু দাঁড়িয়ে সম্মান জানাতেও কি পারো না!
সেই চরকির মতো ঘুরতে ঘুরতে সূর্যটা ঈশানকোণে গিয়ে বসেছে, তাতে কি কেও
আপত্তি করেছে! অথচ ইংল্যান্ড-এ খেলতে গিয়ে বিরাট কোহলি অনুষ্কার সাথে ঘুরলে
তোমাদের আপত্তি, তোমাদের আপ্লিকেশন লেটারটা টেবিলে টেবিলে ঘুরলে তোমাদের
আপত্তি, ভোটের চাকা ডান থেকে বাঁয়ে কিংবা বাম থেকে ডায়ে ঘুরলে তোমাদের
আপত্তি, দেশের প্রধানমন্ত্রী বিদেশ বিভুঁই ঘুরলে তোমাদের আপত্তি, এমনকি
ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার এর আইকন টা ঘুরলেও তোমাদের সহ্য হয় না। ইনটলারেন্স
নয়তো আর কি ই বা বলা যায় শুনি। বছর ঘুরলে যখন জিও এর অফার টা শেষ হয়ে যাবে,
তখন যদি তোমাদের সম্বিৎ ফেরে। তারপর আম্বানি প্রবাসী হলে গোলগোল চোখ করে
প্রশ্ন করো না যে আমাদের ট্যাঁকের টাকা গুলো গেলো কোথায়।
হাজার
হাজার ওপিনিয়ন এর রমরমা তোমাদের মধ্যে। ঢাক ঢোল পেটানো থেকে শুরু করে, লাঠি
সোটা দিয়ে পেটানো অবধি কিছুই বাকি রাখছো না তোমরা তোমাদের ওপিনিয়ন এর
প্রচারে আর প্রসারে। অথচ একটু ড্রিংক করে দেশের মাটি ছেড়ে হাওয়ায় কপিল
শর্মা নিজের মতামত রাখলেই গোলযোগ। সোনু নিগম টুইট করলে তার ওপর চর্চা,
ফতোয়া। কে.আর.কে. এর টুইট এর পর টুইট কে নিয়ে হাসি ঠাট্টা, এমনকি অভিজিৎ
ভট্টাচার্য্য কে তো ব্লকই করে দেওয়া হলো। কেন তোমরা বাহুবলি টু দেখতে
ব্যস্ত বলে কি কেও নিজেদের মতামতও রাখতে পারেনা! কাটাপ্পা বাহুবলি কে কেন
মারলো জানার জন্য বছর খানেক অপেক্ষা করতে পারো, হাজার হাজার কোটি টাকা
ঢালতে পারো অথচ টেট এর পরীক্ষার ফল জানতে লাখ খানেকেও আপত্তি। বলি দেশের
ভবিষ্যৎ কার হাতে, শিক্ষকদের নাকি রাজামৌলীর!
নাহ আর পারছি না
বাপু। সন্ধ্যে হয়েছে, গরু টাকে গোয়ালের খুঁটোয় বেঁধে দুটো খড়কুটো দিয়ে আসি
নাহলে আবার কাল সকালে দুধ পাবো না, শুধু জল তো আর ব্যাচা যায় না। ভাগ্গিস
গরুগুলো লিখতে পড়তে পারে না, নাহলে গরুগুলো হাল চষতে না চাইলে আমাদেরও
আত্মহত্যা করা ছাড়া উপায় থাকতো না। স্বাক্ষরতা মিশনের আওতায় গরুগুলো আসার
আগে একটা দালান ঘর, দেরাজ ভর্তি কাঁচা টাকা, দু একটা গাড়ি, আর একটা
পলিটিকাল পার্টির টিকিট কেটে ফেলতে পারলেই কেল্লা ফতে। তোমরা থাকো তোমাদের
ওপিনিয়ন নিয়ে, আমাদের তো খেয়ে পরে বাঁচতে হবে, নাকি। নসবন্দী করে সংসারে
লোকসংখ্যা টা কমে গেলো, এখন নোটবন্দির দৌলতে ব্যাংকে লাইন দেবে কে শুনি।
শ্বাসবন্দি হওয়ার আগে আরেকদিন যদি বরফঢাকা শক্ত নোনা মাছ আর আড়ৎপচা সবজির
ভুরিভোজ টা হয়ে যায় মন্দ কি।